১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রচ্ছদ অপরাধ, গৌরীপুর, ময়মনসিংহ ময়মনসিংহের গৌরিপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস সহ বিভিন্ন সাব রেজিষ্ট্রি অফিস ঘুষ দুর্নীতির আখড়া
১৮, অক্টোবর, ২০২১, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ - প্রতিনিধি:

 

চীফ রিপোর্টার = ময়মনসিংহের সাব রেজিষ্ট্রি অফিসগুলো ঘুষ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অফিস কর্মচারী আর দলিল লেখক সিন্ডিকেটের কব্জায় চলছে সবকিছু। ঘুষ ছাড়া দলিল সম্পাদন করতে চাইলে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। দলিল সম্পাদন করতে আসা দাতা গ্রহীতাদের জিম্মি করে প্রকাশ্য চলছে এই ঘুষ আদায। এর ভাগ যাচ্ছে নানা মহলে।

সুত্র জানায় জেলার হালুয়াঘাট, ভালুকা, নান্দাইল, গফরগাঁও, তারাকান্দা, ঈশ্বরগঞ্জ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে চলছে একই কায়দায় ঘুষ বানিজ্য।

ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে দুইটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
ফলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার মিলছে না। গৌরীপুরের অফিস সহকারী আম্বিয়া খাতুনকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে শো-কজ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা গৌরীপুরের সাবেক সাব রেজিষ্ট্রার শেখ নাছিমুল আরিফ ও অফিস সহকারী আম্বিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে জেলা রেজিষ্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছেও রয়েছে এই খবর।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সাফ কাওলা, দানপত্র, হেবার ঘোষণা. বন্টনমানা, ভুল সংশোধন, না দাবিসহ নানা দলিল সম্পাদনের কাজে দাতা গ্রহীতারা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসগুলোতে আসছেন। আর দলিল সম্পাদনের কাজকে পুজি করে সাব রেজিষ্ট্রার, দলিল লেখক ও অফিস কর্মচারী সিন্ডিকেট হয়রানির ফাঁদে ফেলে দাতা গ্রহীতাদের কাছ থেকে আদায় করছে খেয়াল খুশিমত ঘুষ। এটি এখন ওপেন সিক্রেট হলেও দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অফিস সহকারীরা প্রতিটি দলিল সম্পাদনের বিপরীতে অফিস সেরেস্তা-খরচের নামে আদায় করছেন নির্ধারিত হারের ঘুষ। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও গুণতে হচ্ছে সেরেস্তার খরচ। আর কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে দর কষাকষি করে নির্ধারণ করা হয় সেরেস্তার অঙ্ক। এসবের বাইরে সাররেজিষ্ট্রারের মনখুশি মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায় তো আছেই।

গৌরিপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের কয়েক কর্মচারী ও দলিল লেখক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘুষ ছাড়া সহজে কোন দলিল সম্পাদন হচ্ছে না। দলিল লেখক সিন্ডিকেট সাবরেজিষ্ট্রারের সাথে লেনদেন করছে বলে প্রচার রয়েছে। সাফ কবলা দলিল সম্পাদন প্রতি বাড়তি দুই হাজার টাকা এবং অন্য যে কোন দলিল সম্পাদন প্রতি পাঁচ হাজার টাকা হারে ঘুষ আদায় এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায় জেলা সদরের বাইরে গৌরীপুরে ভুল সংশোধনের দলিল সম্পাদনে নির্ধারিত ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা, বায়না দলিল সম্পাদনে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, পিতার নাম মাঠ পর্চার দলিলে ১৫শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা, দলিল মুলে দানপত্র দলিল সম্পাদনে ৩ হাজার টাকা সেরেস্তা অনেকটাই বাধ্যতামূলক। এক হাজার টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা মূল্যমানের দলিলে ১৫০০ টাকা, ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার দলিলে ২২০০ টাকা, ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার দলিলে ২৪০০ টাকা, এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকার দলিলে ২৬০০ টাকা, দুই থেকে তিন লক্ষ টাকার দলিলে ৩১০০ টাকা সেরেস্তা প্রদানের রেওয়াজ চালু রযেছে। তিন লক্ষ টাকার ওপরে দলিল সম্পাদনে লাখ প্রতি সেরেস্তা ৪০০ টাকা। প্রচার রয়েছে এভাবে আদায় করা ঘুষের টাকার ভাগ যাচ্ছে আইজিআর ও ডিআরসহ নানা মহলে। এর মধ্যে সাবরেজিষ্ট্রার ৫৪ শতাংশ, অফিস সহকারী-করণিক ৩০ শতাংশ, বাকী টাকা পাচ্ছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ নানাজন।

গৌরীপুর উপজেলার মুখরিয়া গ্রামের মৎস্যচাষী নাজমুল অভিযোগ করে জানান, তার ১৬ হাজার টাকার সাফ কবলা একটি দলিল সম্পাদনে সরকারী ফী হচ্ছে ১৭০০ টাকা। এর বাইরে তাকে ২৫০০ টাকার সেরেস্তা খরচসহ বাড়তি গুণতে হয়েছে আরও ৪ হাজার টাকা।